বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প

বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প এখানে দেওয়া হলো। যাতে নতুন কাপলরা এই গল্প গুলো একজন আরেকজন এর সাথে শেয়ার করতে পারে।

বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প

এই যে সামনে যিনি বসে আছেন ইনি আমার সদ্য বিবাহিত বউ। বয়সে আমার চাইতে গুনে গুনে বছর ১৩ দিনের বড়। ব্যাপারটা কেবল উনি আর আমিই জানি। উনার বাবা এবং আমার পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনের মোটামুটি সবাই জানে ইনি বয়সে আমার চাইতে ১বছর ১৩ দিনের ছোট। জটিল কাজ কেবলমাত্র সম্ভব হয়েছে বার্থ সার্টিফিকেটের কেরামতিতে। উনার সাথে বিয়েটাও হয়েছে জটিল এক রিলেশন পর্বের পর। আপাদত ম্যাডাম চশমা মুচছেন আর আমি মোবাইলে হযবরল টাইপের গল্প লিখছি। আজ আমাদের বাসর রাত আর তারই প্রস্তুতি স্বরূপ আমাদের ভালবাসার পূর্ব ইতিহাস মনে করার চেষ্টা চলছে। কারণ আর খানিক বাদেই ম্যাডাম এসে প্রশ্নের ফুলঝুরি চুটাবেন। আজকের বাসর রাতের বিড়াল মারার যে প্ল্যান সেটা ম্যাডামের ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে খাটের নিচে চাপা পরেছে। আপাদত ম্যাডামের ইচ্ছে হলো আমাদের পুরনো প্রেমের স্মৃতিচারণ হবে। উনি একে একে সব প্রশ্ন করবেন আর না পারিলে ম্যাডামের পাশে ঘুমানোর অনুমতি মিলছে না।

প্রেমের শুরুটা খুব রোমান্টিক মোটেও ছিলো না। সবেমাত্র বিএসসি পাশ করলাম। কোন বিষয়ের উপর সেটা বলে লজ্জিত হতে চাচ্ছি না। কারণ এই সাবজেক্ট এর উপর বিএসসি করে ম্যানেজারের কাজ করাটা আত্মসম্মানহানীকর। তবে বাঁদরামীর সীমটা এতোই ক্রস করে ফেললাম যে, আম্মা এক মুহূর্ত আর বেকার বসে থাকতে দিবে না। বাসায় থাকলেই নানান ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকি। আজ এটা, কাল ওটা, পরশু সেটা,তরশু যেটা আর মনে নাই।

ঝামেলামুক্ত জীবনযাপনের লক্ষে আমাকে আপাদত চারতলা বাড়ি, দুটো গার্মেন্টস, আর একটা ফিলিং স্টেশনের ভুড়িওয়ালা খিটখিটে মেজাজের বৃদ্ধ যুবকের পিএর কাজ করতে হচ্ছে।

ঝামেলামুক্ত হতে গিয়ে মহা ঝামেলার কাজে নিযুক্ত হয়ে গেলাম। শুরুর দিনে এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। একেতো এই গরমে এতোদূরের পথ এসে ঘেমে গোসলপ্রায় অবস্থা তার উপর এই বুইড়া একটু বসতে পর্যন্ত বলছে না। সামনে এতো সুন্দর মোলায়েম সোফা দেখে খুব লোভ লাগছে মনে হচ্ছে এর দাম হাজার চল্লিশ হবে। সোফায় বসতেই শটাং করে কয়েক ইঞ্চি ভিতরে ঢুকে গেলাম। মাথা বাঁকা হয়ে পা উপর হয়ে এক বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলাম। কোনমতে স্থির হয়ে বসতেই ভদ্রলোক কড়া করে বললেনস্ট্যান্ড আপ থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, , এর আগেই নম্বর সংকেত। মহাসমস্যা সমুদ্রে অবস্থানরত নৌযানের কি হবে?

১১ নম্বর মহা মহা বিপদসংকেত ভদ্রলোকে খুব রেগে গিয়ে হুংকার ছাড়ার মতো করে বললো

দাড়াতে বললাম না।(দাড়াতে ঠিক করে শুনা গেলেও লাম এর পর থেকে পুরোপুরি শুনা গেলো না। অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার গলা ভেঙ্গে গিয়েছে)

সাথে সাথেই দাড়িয়ে গেলাম। ভদ্রলোক পানি খাচ্ছেন। পানি খাওয়ার পর একটু প্রস্তুত হয়ে নিলেন কথা বলার জন্য মনে মনে বোধ হয় রিহার্সাল করে নিলেন।

বিশাল পরিচয়পর্বের পালা শেষ করে ভদ্রলোক কাকে যেন ফোন করে আসতে বললেন। তার মিনিটদুয়েকের মধ্যেই শুধুমাত্র পানির গ্লাস হাতে এক তরুণী উপস্থিত।

দেখে লাগছে কদিন আগেই কিশোরীর রেশ কেটেছে। মুখে এখনো বাচ্চা বাচ্চা ভাব। চোখে বিশাল মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া,মাথার চুলগুলো চারপাশে ছড়ানো মনে হচ্ছে একটু আগেই যেন গোসল করে এসেছে এখনো চুলগুলো ভেঁজা। মেয়েরা খুব বেশি শ্যাম্পু দেয় মাথায় সুগন্ধির জন্য,ইনিও বোধ হয় একটি বেশিই শ্যাম্পু দিয়েছেন চুলে যার সুগন্ধি এখান পর্যন্ত আসছে। অবশ্য আমার খুব কাছেই উনি দাড়িয়ে। গোসল কোথায় করে এসেছেন জানার ইচ্ছে ছিলো। অবশ্য ধনী পরিবারের মেয়েরা চাইলেই পুকুরে ডুব দিয়ে গোসল করে আসতে পারে না। এনাদের গোসলের জন্য ব্যবস্থা আছে অত্যাধুনিক সব জিনিসপাতির।বেশিরভাগই গোসল সাড়েন বাথ টাবে আবার অনেকে বিলাসিতা করে সুইমিং পুলও বানিয়ে ফেলেন বাসার ছাদে বা বাড়ির পাশে কোথাও। রহমান সাহেবের বাড়িতেও বোধ হয় সুইমিং পুল এর ব্যবস্থা আছে।

এই কিশোরীও বোধ হয় বাথ টাবে বা বাথরুমের ঝর্ণার পানিতে গোসল সেড়ে এসেছেন। পরনে হালকা সবুজ রঙের থ্রি পিছ জাতীয় পোষাক। হালকা করে কাজল দেওয়া চোখগুলো খুব সরল হলেও আপাদত আমার দিকে খুব কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাকানোরই কথা কারণ আমি বেশ খানিক ধরেই উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। না তাকিয়ে থাকারও কোন কারণ নেই উনার মায়া করা এই চেহারার দিকে তাকালেই শহরে দামী রেস্টুরেন্টে বসে প্রেমিকার সাথে একান্ত সময় কাটানো তরুণও উনার প্রেমের টানে সদ্য গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে চলে আসার সম্ভাবনা আছে। আপাদত উনি আমার হাতে শুধুমাত্র পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে দিয়ে গজগজ করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন। সিড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে। বাহারি সব ডিজাইনের টাইলস করা। মনে হচ্ছে বাইরের কোন দেশ থেকে স্পেশিয়ালি অর্ডার করে বানিয়ে আনা। যাথে অন্য কারো সাথে মিলে না যায়। কোটিপতি ধাচের মানুষের এই জিনিসটা খুব কমন। তারা কমন কোন জিনিস সহজে কিনতে চাই না সবকিছুই হতে হবে আলাদা। এতক্ষণে চোখে পরলো ঘরটা এতো সুন্দর করে সাজানো।ঘরের বিবরণ আরেকসময় হবে।

রহমান সাহেবের ম্যানেজার হিসেবে আমি নিয়োগ পেলাম ঠিক তবে ঘরের কাজের ছেলের চাইতেও কোন অংশে আপাদত কম নয় আমি। বাজার থেকে ঝাড়ু কেনা হতে শুরু করে প্রায় প্রায় থাক বর্ণনা না দেই আর।

আচ্ছা এগুলা হয়তো প্রশ্ন করবে না তাহলে এগুলো মনে করছি কেন শুধুশুধু। ধুর

সিলেবাসইতো হলো প্রেম কীভাবে হলো থেকে শুরু করে আজ অবধি। তাহলে সিলেবাসের বাইরে পড়ার কোন মানেই হয় না। ছোট বেলা থেকে এমনিতেই সিলেবাসের বাইরে কোনদিন কেউ পড়তে শিখালো না। একমাত্র আব্বা ছাড়া।

যাই হোক সিলবাসের মধ্য থেকেই আপাদত ভাবা যাক। আমাদের প্রেমের শুরুটা খুব একটা ঝাঁকজমক ছিলো নাহ। প্রেম অবশ্য ঝাঁকজমক করে শুরু হওয়ার কোন কথা ছিলো না। প্রায় প্রতিদিন সকাল টার মধ্যে রহমান সাহেবের সামনে আমাকে উপস্থিত হতে হয়। বুড়ো হলেও উনার রুটিনে কোন ফাঁকফোকর নেই। ঘড়ির কাটাই কাটাই চলে। সকাল টায় ঘুম থেকে উঠে হাটাহাটি সেড়ে এসে বাগান পরিচর্যা আর ঠিক টাই এক কাপ কড়া রং চা আর ইংরেজী খবরের কাগজ নিয়ে বসবেন বাগানের পাশে যে কাঠের ছোট্ট টেবিল আর তিনটে বেতের চেয়ার পাতা আছে ওখানটাই। বেশিরভাগ সময় গেইটের দিকে মুখ করে বসে। যাথে কারো আসাযাওয়া চোখের আড়াল না হয়। এই টাইম টাই দাড়োয়ান ব্যাটা বেশ জব্দ হয়।একটা সেকেন্ডের জন্যেও এদিকওদিক যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি প্রতিদিন ঠিক টাই হাজির হলেও আজ মিনিট লেইট করেছি। ঘুম থেকে উঠতে লেইট হওয়ার কারণে আজ কিছু খেয়ে আসা হয়নি। খালি পেট থাকলেই আমার সমস্যা। হয় মাথা ব্যথা নয়তো বমি। মিনিট লেইট হওয়ার কারণে স্যরের লম্বা বক্তৃতা শোনার পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাগজ পড়া শেষ করে আমার দিকে এক মিনিট ভালো করে তাকালেন যদিও মাঝখানে কয়েকবার উঁকি দিয়েছিলো। ঘড়ির কাঁচ পরিষ্কার করে ভালো করে সময় দেখে নিলেন একটু পর জানালেন আমি পুরোপুরি মিনিট ৩৬ সেকেন্ড লেইট। আপাদত কিছু বলে উনার ঘ্যানঘ্যানানির বিস্তৃতি বাড়ানো কোন ইচ্ছে নেই। পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় আর কিছু খেতেই ভুলে গিয়েছিলাম। মাথা ধরেছে প্রচন্ডভাবে ছুটি নেওয়া দরকার। স্যরের বাসায় আসলাম ছুটির জন্য। একটু পরেই কিছুই মনে নেই। বোধ হয় সেন্সলেস হয়ে পরেছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলতেই হকচকিয়ে গেলাম। আমার পাশে বসে আছেন রহমান সাহেবের একমাত্র কন্যা মেহতাজ তাবাস্সুম অপর্ণা। এই দুমাসে একবারও ঘরের দিকে আসা হয়নি, দরকারও হয়নি কখনো। কিন্তু সবচাইতে বেশি অবাক হলাম ঘরে এতো রুম থাকার পরেও এই রুমেই কেন আমাকে আনা হলো।

লেখাঃ রাফায়াত

আরও পড়ুন: রোমান্টিক কথা

3 thoughts on “বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প”

Leave a Comment