বাংলা রোমান্টিক লাভ স্টোরি

বাংলা রোমান্টিক লাভ স্টোরি। প্রেম-ভালোবাসার গল্প শুনতে গেলে একটু রোমান্টিক গল্পনা হলে চলে না তাই আজকে কিছু রোমান্টিক লাভ স্টোরি দিয়ে শুরু করবো।
রোমান্টিক লাভ স্টোরি

আমার একটা নব্বই দশকের প্রেম হোক।

ওয়েস্টার্নের বদলে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে পা মিলিয়ে পথচলা হোক। হুডখোলা রিক্সায় লজ্জা রাঙা মুখে দূরত্ব রেখে বসা হোক। দামী গিফটের বদলে এক পাতা টিপ, একমুঠ চুড়ি দেয়া হোক। রেস্টুরেন্টের বদলে টংয়ের চা, ফুটপাতের ঝালমুড়ি একসাথে খাওয়া হোক। একটা কাঠগোলাপ বা বেলীর মালা খোঁপায় গুজে দেয়া হোক। বইয়ের ভাজে একটা চিরকুট অথবা বুকপকেট থেকে খাম ছাড়া চিঠি দেয়া হোক। প্রচন্ড জ্বরের সময় তার কেয়ারিংটা মেডিসিন হোক। মন খারাপের বিকেলে তার একটা কবিতা মন ভালো করুক। কাছাকাছি থাকলে তার কাঁধে মাথা রাখার সুযোগটুকু দেয়া হোক। বিশ্বাস, ভরসার একটা হাত হোক। আমাকে দেওয়া কথাগুলো রাখতে শিখুক। ভালো দিকগুলোর সাথে খারাপ দিকগুলোকেও ভালোবাসুক। খারাপ সময়ে হাতটা শক্ত করে ধরে রাখুক। শক্তপোক্ত একটা সম্পর্ক হোক। নিয়মে, অনিয়মে ভালোবাসার একজন মানুষ হোক।

আমার একটা নব্বই দশকের প্রেমিক হোক।

কাছে আসার গল্প”_________

আজ আমার নতুন স্কুলের প্রথম দিন।ক্লাস ফোরে ভর্তি হয়েছি।নতুন ড্রেস পরে বাবার সাথে যাবো।কিন্তু আম্মুর উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।প্রথম দিন যাবো একটু স্টাইল দিয়ে কিন্তু আম্মু মাথায় তেল দিয়ে চুল লেপ্টে দিয়েছে!

যাইহোক গেলাম স্কুলে।ক্লাসের সবাই কেমন যেনো অদ্ভুত ভাবে দেখছিলো আমাকে।একটু একটু হাসছিলোও বটে।মনে হয় আমার চুল দেখেই হাসছিলো,ধুররর আম্মুর উপর আরো রাগ হচ্ছে।

তো সেদিন ক্লাস করলাম।এভাবে কিছুদিন ক্লাস করার পর একদিন একটা মেয়েকে আমার ভালোলাগে।না,প্রেম ট্রেম না।আসলে ক্লাসের সব মেয়েগুলো কেমন যেনো ছেলেদের মতো চুল কাটে আসতো।শুধু ওরই চুল গুলো একটু বড় ছিলো।তাই একটু ভালো লাগতো।

ভাব জমানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।কারন ও অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো,ফালতু আলাপচারিতা করতো না।

আরও পড়ুন: ভালোবাসার শায়েরী

 

তো এর মাঝেই আমাদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো,আমার পছন্দের মেয়েটা ক্লাসে ফার্স্ট হলো।আর আমি বেশী না,মাত্র দু সাব্জেক্টে ফেল করেছিলাম।কি করবো আমার পড়ালেখার প্রতি ইন্টারেস্ট ছিলো না।গান গাইতে ভালো লাগতো।তো এর মাঝেই স্কুলে স্পোর্টস শুরু হলো।আমি নাম দিলাম গানে!

স্পোর্টস এর দিন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় একটা রোমান্টিক গান গেয়েছিলাম।স্কুলের সবাই দ্বিতীয় বারের মতো আমাকে চিনেছিলো নতুন করে।প্রথমবার চিনেছিলো ক্লাস ফোরে দু সাব্জেক্টে ফেল করার কারনে!

তো বর্ষা সেদিন আমার গান শুনে আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে আসে।বর্ষা মানে সেই চুল বড় মেয়েটা!খুব প্রশংসা করে,আমি তো লজ্জ্বায় লাল।তো সেদিন বাসায় ফিরে ঘুম হয়নি।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে দেখি বর্ষা আমার জন্য জায়গা রেখেছে।আমি তো অবাক,এক গানেই মেয়ে পটে গেলো।তো এভাবেই আমাদের কাছে আসা শুরু হয়,তবে প্রেম ট্রেম না কিন্তু।

স্কুলজীবনটা এভাবেই কেটে যায়,ফেল করতে করতে!বর্ষা স্কুলে টপ রেজাল্ট করে আর আমি লিস্টের লাস্টে।গানটা চালিয়ে যেতে থাকি!

তো কলেজে ভর্তি হলাম দুজন।ও ভর্তি হলো নাম করা একটা কলেজে আর আমি নামে মাত্র একটা কলেজ,ছাত্র ছাত্রী সব গরু ছাগল।তো কলেজেও গান টান গেয়ে সবার পরিচিত মুখ হয়ে যাই।দেখতে শুনতেও ভালো ছিলাম,অনেক মেয়েই প্রেম করতে চাইতো।তবে আমার প্রেম ছিলো বর্ষা।যদিও বর্ষা তখনো কিছুই জানতো না!

ওর সাথে ফোনে কথা হতো,মাঝে মাঝে চিঠি পাঠাতাম।বন্ধুর মতোই।

তো সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর আমার ইচ্ছে হলো বর্ষাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাতে!

তাই একদিন ওকে লাইব্রেরীতে আসতে বললাম।ভাবলাম ওখানেই ওকে প্রোপোজ করবো।তো ও আসে,কথা কিছু বলার আগেই আমার গান শুনতে চায়।ফিসফিস করে কয়েক লাইন শুনিয়ে দিলাম।তারপর ভালোবাসার কথা বলতে যাবো তখনই ওর বাসা থেকে ফোন।তাড়াহুড়ো করে চলে যায় বর্ষা।

আজও হলো না!তারপর অনেক চেষ্টা করে ওকে জানিয়ে ছিলাম ওর মনের কথা।কিন্তু ওর রিপ্লে শুনে আমি তো অবাক! ও বলে এতোদিন কেনো লাগিয়েছি কথাটা বলতে,সে নাকি অনেক আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতো।শুনে কয়েকটা লাফ দিয়েছিলাম,নেচেছিলাম কয়েক ঘন্টা হিসাব নেই!

এর মধ্যেই আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়।বর্ষার সাথে যোগাযোগ বন্ধ।আমিও ওকে বিরক্ত করতাম না,কারন আমি জানি ও খুব ভালো স্টুডেন্ট।আমার জন্য ওর পরীক্ষা খারাপ হোক সেটা চাইনি।

তো পরীক্ষা শেষ হলো আবারো প্রেম শুরু।রেজাল্ট দিলো বর্ষা আমাদের বিভাগে প্রথম হয়েছিলো আর আমি ফেল।

বাসায় ফিরতেই আব্বু আমার ঘাড়টা ধরে বের করে দেয়।আর জানিয়ে দেয় আমি যেনো আর ফিরে না আসি।

আরও পড়ুন: লাভ পিকচার ছবি ফটো

 

আব্বুর কথায় রাগ হইনি।আসলে অনেক কষ্টে সে এমনটা করেছে।আমার জন্য অনেক কষ্ট করতো সে।আর অকৃতজ্ঞ আমি করলাম ফেল।তো বেরিয়ে গিয়ে বন্ধুর মেছে উঠলাম।বর্ষাকে জানালাম পুরোটা।ও অনেক কান্না করেছিলো।পরে আম্মু ফোন দিয়ে বাসায় ফিরতে বললো,আমি ফিরি নাই।আম্মু অনেক কেঁদেছিলো আর বলছিলো বাবা আমাকে বের করে দিয়ে নাকি অনেক্ষন কেঁদেছে।

তো বন্ধুর সাহায্যে একটা ফার্স্টফুডের দোকানে চাকরী নেই।

আর টুকটাক গান করতাম,বিয়ে বাড়িতে,ছোট খাটো অনুষ্ঠানে।এভাবেই চলে যেতো। তো এর মাঝেই একদিন বর্ষা জানায় ওর জন্য নাকি বিয়ের কথা আসছে।ছেলে মারাত্মক বড়লোক।ফোন করে মেয়েটা কাঁদছিলো অনেক।কি করবো বুঝে উঠছিলাম না।আম্মুকে ফোন দিয়ে জানালাম,আম্মু বললো তোর বাবাকে জানালে আমাকে খুন করে ফেলবে।বুঝে গেলাম পারিবারিক ভাবে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না!

এদিকে বর্ষাকে হারিয়ে বেঁচে থাকাটাও অসম্ভব!

তারপর দুজনে পালিয়ে যাবার কথা ভাবলাম।চিন্তা মতো পালিয়েও গেলাম।শুধু ভাবছিলাম,আমি যে রাজকন্যাকে নিয়ে পালাচ্ছি তাকে সারাজীবন ধরে রাখতে পারবো তো?

আমি তো কোনো দিক দিয়েই ওর যোগ্য না!তো ওকে বিয়ে করলাম ৫ টাকা দেনমোহর দিয়ে।আহারে!রাজকন্যার বিয়ে হচ্ছে ৫ টাকা দেনমোহরে! তারপর বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে একটা বাসা ঠিক করলাম।আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনলাম।

তো এভাবে কিছুদিন যাবার পর হঠাৎ একদিন বর্ষার বাবার ফোন!খোজ খবর নেয়।কিন্তু ফিরিয়ে নেবার কথা কিছু বলে না,আর জানায় তাকে যেনো বর্ষা বাবা হিসেবে পরিচয় না দেয়!

সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।রক্ত বিক্রি করে হলেও এই রাজকন্যার কোনো কষ্ট হতে দেবো না।তো এভাবে শুরু হয় আমাদের সংসার।বর্ষা রান্না করতো।কিন্তু সেটা খাওয়া কষ্টকর ছিলো।তবে ভালোবাসার তীব্রতায় তৃপ্তি ভরে খেয়ে নিতাম!টাকা পয়সা তেমন ছিলো না তবে ভালোবাসার অভাবও হতো না।আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম।এতো কম কিছুতেই মেয়েটা কিভাবে খুশি হয়ে যায়।

ছাদে বসে জোৎসনা দেখা হয়নি কখনো কারন আমাদের ঘরটা টিনসেড ছিলো।তবে বাইরে বসে দেখতাম।কাঁচের চুরিতেও সে যেনো হিরের নেকলেসের মতো খুশি হতো।

আম্মু মাঝে মাঝে ফোন দিতো।লুকিয়ে লুকিয়ে টাকা পাঠাতো।ভালোবাসা প্রকাশ করতো না।তবে বুঝতাম তার কলিজাটা চিরে যেতো আমাকে না দেখতে পেরে।

আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে সব সময় কৃতজ্ঞ ছিলাম কারন সে আমার জীবনে এমন দুটো মেয়ে মানুষ পাঠিয়েছে যারা আমার জান্নাত!

তো বর্ষা একদিন আমাকে একটা পোষ্টার দেখায় “সিংগিং কম্পিটিশন”! উদীয়মান শিল্পীরা নিজেদের প্রতিভা দেখাবে।তো বর্ষার অনুপ্রেরণাতেই সেখানে গান গাই।এবং আমি প্রথম হই।

অনেকগুলো টাকা পেয়েছিলাম।বেশিরভাগ টাকাই বর্ষা সংসারের জিনিসপত্র কিনে শেষ করে।আর বাকীটা আমার অনুরোধে ও নিজের জন্য খরচ করে।মানে আমি ওকে ভর্তি হতে বলি।আমি জানি ওর আরো পড়ার ইচ্ছা।তো সমস্যা হতো না।কারন অনেকগুলো স্কলারশিপ ছিলো ওর।আর আমিও বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে টাকা রোজগার করতাম।দোকানের কাজটা ছেড়ে দেই।প্রোফেসনাল সিংগার এর মতো গান গাওয়া শুরু করি।আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়তে শুরু করে।

আরও পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী

 

কনসার্ট এ গান গাওয়া শুরু করি।তারপর মোটামুটি একটা ভালো পজিশনে চলে যাই।ভালো একটা বাসা ভাড়া নেই।আর ওদিকে বর্ষার মেডিকেলে পড়াশুনা চলছে সুন্দর ভাবে।দুজন দুজনের ক্যারিয়ার গোছানো শুরু করি।আর রাত হলে চাঁদ দেখি,হ্যাঁ এখন ছাদে বসেই দেখি।

তো এভাবে তিন বছর কেটে যাবার পর আমি ভালো একজন প্রতিষ্ঠিত গায়ক।সবাই চেনে আমাকে।

আর বর্ষাও মেডিকেল শেষ করে ডাক্তারি প্রাক্টিক্যাল শিখছে।ওগুলো আমি বুঝি কম।কারন পড়ালেখায় আজীবন এলার্জী ছিলো আমার।

তো কিছুদিন পর বর্ষা কনসিভ করে।আমি তো সেদিন পৃথিবীর সব থেকে খুশী মানুষ।আম্মুকে ফোন করে জানালাম,আব্বুকেও!

বর্ষা ওর বাবাকে ফোন দেয়।আশ্চর্যের ব্যাপার শশুর মশাই আজ রাগ করে নেই।বরং আমার কথাও জানতে চাচ্ছিলো আমি কেমন আছি!

যেহেতু বর্ষা অসুস্থ। বাসার রান্না বান্না আমি নিজেই করতাম।খাইয়ে দিতাম আদর করে।কাজের লোক রাখিনি।কারন ওর কাজগুলো করার মাঝে আমি প্রেম খুজে পেতাম।তো এভাবে মাস গুলো কেটে যায়।বর্ষার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে পরী আসে।ওকে দেখতে আমার আব্বু আম্মু ওর আব্বুও এসেছিলো।বর্ষার মা নেই!তাই আমার আম্মুই ওর মা হয়া যায়।বাবা সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কেঁদেছিলো।আমি বাবাকে বার বার শুধু একটা কথাই বলছিলাম,বাবা সেদিন তুমি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে না দিলে আজ হয়তো আমার এই অবস্থানে আসা হতো না!

তো যাই হোক! মেয়েটাকে কোলে নিয়ে হেসেছিলাম সাথে কেঁদেও ছিলাম।আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।তো এভাবে চলতে থাকে আমাদের জীবন।

বর্ষা নিজের একটা হসপিটাল খুলেছে।বিনামূলে চিকিৎসা দেয়া হয়।আর সেটা শুধুমাত্র সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য।

টাকার কোনো অভাব ছিলো না আামাদের!প্রচন্ড ভালোবাসা,প্রচন্ড প্রেম।সব সুখ সব আনন্দ পেয়েছি জীবনে।

মেয়েটা বড় হয়েছে,তার পছন্দ মতো ছেলের সাথেই বিয়ে দিয়েছি।কারন টাকার থেকে যে ভালোবাসা অনেক গুরুত্বপূর্ন সেটা আমাদের থেকে কে ভালো জানে!

তো এভাবে বছরের পর বছর কেটে যায় বর্ষা আর আমার প্রেম!চামড়া কুচকে গেছে ভালোবাসা না!আজও বর্ষাকে আমি মুগ্ধ চোখেই দেখি…!

চলছে ভালোবাসা অবিরাম…..

(গল্পটা একটু বড় হইছে।তাও পুরোটাই দিয়ে দিছি)

লেখা :

Utsho Khan 

Leave a Comment