বঙ্গবন্ধুর স্মরণীয় উক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ক্যাপশন স্ট্যাটাস। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বিশ্বের অন্যতম মহান নেতা, এছাড়াও তিনি জাতির পিতা নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। শেখ মুজিব ১৭ই মার্চ ১৯২০ টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। তিনি ছিলেন পরিবারের তৃতীয় সন্তান।
তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু (বাংলার বন্ধু) উপাধিতে জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের একটি পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) ভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসাবে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের একজন প্রধান নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন এবং অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতা হন। শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন বাড়ানোর প্রচেষ্টায় এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনের ফোকাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুই য়ের সাথে তুলনা করা যায়। জনগন তার কাছে এতপ্রিয় ছিল যে লুই ইয়ের মত তিনি এ দাবী করতে পারেন আমি ই রাষ্ট্র।
পশ্চিম জার্মানী পত্রিকা।
শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে।
বিবিসি ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতীষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।
সাদ্দাম হোসেন।
শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে,আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।
ফিদেল কাস্ট্রো।
আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য।
ইয়াসির আরাফাত।
আরো পড়ুন: ডেল কার্নেগীর উক্তি
৮।মুজিব হত্যার পর বাঙালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না,যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে। — নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট।
শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
কেনেথা কাউণ্ডা
শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন।তার অনন্যসাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।
ইন্দিরা গান্ধী।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাঙলাদেশই শুধু এতিম হয় নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।
জেমসলামন্ড, ইংলিশ এম পি
‘শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।’
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মতে
‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিতনা।’
ফিনান্সিয়াল টাইমস বলেছে
‘যিশুমারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।
ভারতীয় বেতার ‘আকাশ বানী’ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে,
‘বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।
একই দিনে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে,
“পয়েট অফ পলিটিক্স বলে”।
নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দেওয়া হয়,
“শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্যা ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা”।
বৃটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন,
“তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।”
জাপানী মুক্তি ফুকিউরা আজও বাঙালি দেখলে বলে বেড়ান,
“শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উচুঁতে ছিলো তার মাথাটি, সহজেই চোখে পড়তো তার উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশকে তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তার পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তার সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।”
হুমায়ুন আজাদ
‘টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের কবর একদিন সমাধিস্থলে রূপান্তরিত হবে এবং বাঙালির তীর্থস্থানের মতো রূপলাভ করবে’।
মরহুম মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীও বলেছিলেন
১৯৭৫ সালে জনাব জিয়াউর রহমান সাহেব যখন ক্ষমতায় তখন তিনজনের একটা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের টিম বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের একজন ব্র্যায়ন ব্যারন। যাদের তিন দিন শেরাটনে আটকিয়ে রেখে স্বৈরশাসক সরাসরি বিমানবন্দর দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। দেশে ফিরে ব্যারন লিখেছিলেন- ‘১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লিখিত তার সংবাদ বিবরণীতে বলা হয়, শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তার বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-চিহ্ন এবং তার কবরস্থান পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে।’
দি লিস্নার, লন্ডন, ২৮ আগস্ট, ১৯৭৫।
“তোমরা আমার ই দেয়া ট্যাং দিয়ে আমার বন্ধু মুজিব কে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি”।
বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার সংবাদ শুনে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে,তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন
গণতন্ত্র, বিরোধী দল, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রশ্নে
দেশে কোর্ট-কাচারি আছে, আছে প্রচলিত আইন এবং কাউকে শাস্তি দিতে হলে যথাযোগ্য বিচারের মাধ্যমে সেটা দিতে হবে। আমরা জানি যে বিগত সাত বছর এই পবিত্র সংসদের অনেক সদস্যকে বিনা বিচারে জেলে নেওয়া হয়েছে। একজন মাননীয় সদস্য পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন, তাঁকে পাকিস্তানের স্বার্থে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
২১ জানুয়ারি ১৯৫৬
পাকিস্তান গণপরিষদের করাচি অধিবেশনে ইসলামিক রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সম-অধিকার বিষয়ে আলোচনায়
আমাদের টেলিফোন টেপ করা হয় এবং চিঠিগুলো পুনরায় সেন্সর করা হয়। আপনারা বলে থাকেন যে বাক্স্বাধীনতা মানেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। আপনি কি জানেন যে পূর্ববঙ্গে সম্পাদকদের ডেকে বলা হয় আপনারা এটা ছাপাতে পারবেন না; আপনারা ওটা ছাপতে পারবেন না। স্যার, তাঁরা সত্য কথা পর্যন্ত লিখতে পারেন না এবং আমি সেটা প্রমাণ করে দিতে পারি। পূর্ব বাংলা সরকার লিখুক আর একজন কেরানি লিখুক, সেটা বড় কথা নয়। নির্দেশটা যায় সচিবালয় থেকে যে আপনি বিষয়গুলো সম্পর্কে লিখতে পারবেন না। সরকারের তরফ থেকে একজন ইন্সপেক্টর গিয়ে নির্দেশনা দেন যে আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে পারবেন না।
৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬, পাকিস্তান গণপরিষদের করাচি অধিবেশনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে
অসাম্প্রদায়িকতা
শাসনতন্ত্রে লিখে দিয়েছি যে কোনো দিন আর শোষকেরা বাংলার মানুষকে শোষণ করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ। দ্বিতীয় কথা, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চালাবে, এর মধ্যে কারও কোনো হাত থাকা উচিত নয়। তৃতীয়, আমি বাঙালি। বাঙালি জাতি হিসেবে বাঁচতে চাই সম্মানের সঙ্গে। চতুর্থ, আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, বুদ্ধিস্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। তবে একটা কথা হলো, এই ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩
বৈষম্যের বিরোধিতা, স্বাধীনতার সংগ্রাম
কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তোমরা ৮৫ জন, আমরা ১৫ জন। সামরিক বিভাগে তোমরা ৯০ জন, আমাদের দিয়েছ ১০ জন। বৈদেশিক সাহায্যের তোমরা খরচ করেছ ৮০ ভাগ, আমাদের দিয়েছ ২০ ভাগ। মহাপ্রলয়ে দক্ষিণ বাংলার ১০ লাখ লোক মারা গেল। লাখ লাখ লোক অসহায় অবস্থায় রইল। রিলিফ কাজের জন্য বিদেশ থেকে হেলিকপ্টার এসে কাজ করে গেল—অথচ ঢাকায় একখানা মাত্র সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর কোনো হেলিকপ্টার আসলো না। আমরা এসব বেইনসাফির অবসান করব।
৩ জানুয়ারি ১৯৭১, সিরাজগঞ্জে দেওয়া এক জনসভার ভাষণ
রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের জনগণের সামনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান
কারও ওপর আমাদের কোনো আক্রোশ নাই। আমরা স্বাধিকার চাই। আমরা চাই আমাদের মতোই পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ, পাঠানরা নিজ নিজ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। কিন্তু তার মানে এই না যে সাত কোটি বাঙালি কারও গোলাম হয়ে থাকবে। ভ্রাতৃত্বের অর্থ দাসত্ব নয়—সম্প্রীতির, সংহতির নামে বাংলাকে আর কলোনি বা বাজার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে না।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১, শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিল শুরুর আগে
মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
সাতই মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণ
রাজনৈতিক সমঝোতা ও সহনশীলতা
আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নয়, সমস্ত পাকিস্তানেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। তাই সমগ্র জাতির প্রতি আমার ও আমার দলের একটা বিরাট দায়িত্ব আছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পূর্ণ ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে। তবু জনাব ভুট্টো ও তাঁর দলসহ বেলুচ ও সীমান্ত অঞ্চলের আঞ্চলিক দল ও সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গেও আমি আলোচনা করতে চাই।
২৯ জানুয়ারি ১৯৭১, বাসভবনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যোগ্যতা আওয়ামী লীগের থাকলেও আমরা সবার সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব চাই। গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাই সবাই মেনে নেয়। গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী আমরাই শাসনতন্ত্র রচনার ক্ষমতা পেয়েছি। আমরা শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দিচ্ছি না।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১, ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দুই দিনব্যাপী এক যৌথ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্য
আত্মসমালোচনা
দেশ শাসন করতে হলে নিঃস্বার্থ কর্মীর প্রয়োজন। হাওয়া-কথায় চলে না। সেদিন ছাত্ররা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাদের বলেছিলাম, আত্মসমালোচনা করো। মনে রেখো, আত্মসমালোচনা করতে না পারলে নিজকে চিনতে পারবা না। তারপর আত্মসংযম করো, আর আত্মশুদ্ধি করো। তাহলেই দেশের মঙ্গল করতে পারবা।
১৮ জানুয়ারি ১৯৭৪, আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী বক্তৃতা
আজকে এই যে নতুন এবং পুরান যে সমস্ত সিস্টেমে আমাদের দেশ চলছে, আমাদের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন আছে। আত্মসমালোচনা না করলে আত্মশুদ্ধি করা যায় না। আমরা ভুল করেছিলাম, আমাদের বলতে হয় যে, ভুল করেছি। আমি যদি ভুল করে না শিখি, ভুল করে শিখব না, সে জন্য আমি সবই ভুল করলে আর সকলেই খারাপ কাজ করবে, তা হতে পারে না। আমি ভুল নিশ্চয়ই করব, আমি ফেরেশতা নই, শয়তানও নই, আমি মানুষ, আমি ভুল করবই। আমি ভুল করলে আমার মনে থাকতে হবে, আই ক্যান রেকটিফাই মাইসেলফ। আমি যদি রেকটিফাই করতে পারি, সেখানেই আমার বাহাদুরি। আর যদি গোঁ ধরে বসে থাকি যে, না আমি যেটা করেছি, সেটাই ভালো। দ্যাট ক্যান নট বি হিউম্যান বিইং।
১৯ জুন ১৯৭৫, বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দেওয়া ভাষণ
দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে
এখনো কিছুসংখ্যক লোক, এত রক্ত যাওয়ার পরেও যে সম্পদ আমি ভিক্ষা করে আনি, বাংলার গরিবকে দিয়ে পাঠাই, তার থেকে কিছু অংশ চুরি করে খায়। এদের জিহ্বা যে কত বড়, সে কথা কল্পনা করতে আমি শিহরিয়া উঠি। এই চোরের দল বাংলার মাটিতে খতম না হলে কিছুই করা যাবে না। আমি যা আনব এই চোরের দল খাইয়া শেষ করে দেবে। এই চোরের দলকে বাংলার মাটিতে শেষ করতে হবে।
৩ জানুয়ারি ১৯৭৩, বরগুনায় এক জনসভায় দেওয়া ভাষণ
নারীর প্রতি আস্থা ও সম্মান
আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০/১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।
২৬ মার্চ ১৯৭২, ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য
ছাত্রলীগ ও ছাত্রদের প্রতি
ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করেন। আপনাদের লজ্জা না হলেও আমার মাঝে মাঝে লজ্জা হয় যখন নকলের কথা আমি শুনি। ডিগ্রি নিয়ে লাভ হবে না। ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হওয়া যায় না। ডিগ্রি নিয়ে নিজের আত্মাকে ধোঁকা দেওয়া যায়। মানুষ হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। আমি খবর পাই বাপ-মা নকল নিয়া ছেলেদের-মেয়েদের এগিয়ে দিয়ে আসে। কত বড় জাতি। উঁহু! জাতি কত নিচু হয়ে গেছে।
১৮ মার্চ ১৯৭৩, বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় দেওয়া ভাষণ
রাস্তা নেই ঘাট নেই, রেলওয়ে ব্রিজ এখন পর্যন্ত সারতে পারি নাই। চরিত্র এত জঘন্য খারাপ হয়ে গেছে যেই ধরি পকেটমাইর ধরি, চোর-গুন্ডা ধরি, লজ্জায় মরে যাই ছাত্রলীগের ছেলে, ভাই-বোনেরা। পুলিশ দিয়া নকল বন্ধ করতে হয় আমার এ কথা কার কাছে কবো মিয়া? এ দুঃখ! বলার জায়গা আছে মিয়া? তোমরা নকল বন্ধ করো। ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন নিয়া সংগ্রাম পরিষদ করেছ, তোমরা গার্ড দিয়া নকল বন্ধ করো। তোমাদের আমি সাহায্য করি। পুলিশ দিয়া আমাদের নকল বন্ধ করতে দিয়ো না তোমরা। পুলিশ দিয়ে আমি চোর সামলাব।
১৯ আগস্ট ১৯৭৩, ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া ভাষণ
আমি দেখতে চাই যে, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ফার্স্টক্লাস বেশি পায়। আমি দেখতে চাই, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ওই যে কী কয়, নকল, ওই পরীক্ষা না দিয়া পাস করা, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলো।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, ঢাকায় ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণ
সরকারি কর্মচারীদের প্রতি
‘সমস্ত সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যাতে কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে, আপনারা অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান, একটা নিরপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়। তাতে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন, শেষ পর্যন্ত আমাকেও আল্লাহর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি আপনাদের জাতির পিতা, আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাদের নেতা। আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে।’
১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫, প্রথম পুলিশ সপ্তাহ ও বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণ