ত্বক ও শরীরের জন্য পেপে পাতার রসের উপকারিতা। যখন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায়ে আসে, আমরা প্রায়শই নিম, তুলসী, অ্যালোভেরা এবং পুদিনা পাতার কথা চিন্তা করি। তবে এই তালিকার নতুন সংযোজন হলো পেঁপে পাতার রস এই পাতায় ঔষধি গুণ রয়েছে। এমনকি আয়ুর্বেদ এটিকে কয়েকটি প্রাণঘাতী রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হিসাবে বিবেচনা করে। যদিও সরাসরি পাতা খাওয়া কঠিন হতে পারে তবে এই পাতাকে রস আকারে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে
তাজা পেঁপে পাতার রসে প্যাপেইন এবং ক্যারোকেনের মতো প্রয়োজনীয় যৌগিক উপাদান রয়েছে যা রক্তের প্লেটলেট এর পরিমান বাড়িয়ে তোলে এবং ডেঙ্গু জ্বরের সময় এর সংক্রমণ হ্রাস করে ফেলে।
ম্যালেরিয়া–প্রতিরোধে পেপে পাতার রস
যদিও আজ অবধি চিকিৎসা শাস্ত্রে কোনও কিছুই নথিভুক্ত করা হয়নি তবে কিছু পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে পেঁপে পাতার রস কার্যকরভাবে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করতে পারে। এর প্লাজমোডিস্ট্যাটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পরোক্ষভাবে ম্যালেরিয়ার জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে।
হজম শক্তি বাড়াতে
টাটকা পেঁপে পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পেঁপেইন, চিমোপেইন এবং প্রয়োজনীয় ফাইবারযুক্ত যা রস আকারে সেবন করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফোলাভাব, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্ত্রের গতির মতো সমস্যা দূর হয়।
লিভার সমস্য থেকে মুক্তি পেতে
পেঁপের পাতার রস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আপনার রক্ত পরিষ্কার করে। এই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে লিপিড পারক্সিডেশনকে আরও হ্রাস করে দেয় এবং লিভারকে সিরোসিস এবং জন্ডিসের মতো সমস্ত ধরণের প্রদাহজনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে
ত্বকের জঞ্জাল ছিদ্রগুলি খোলার জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসাবে তাজা পেঁপে পাতার রস ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যদি কেউ নিয়মিতভাবে (সপ্তাহে দুবার) ব্যবহার করতে পারে তাহলে এটি মুখ থেকে ফোঁড়া, ব্রণ এবং অতিরিক্ত তেল দূর করে দিবে।
ক্যান্সার এর হাত থেকে বাচতে
পেপে পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত রয়েছে, এটি হলো এমন একটি উপাদান, যা শরীর থেকে টক্সিক জাতীয় উপাদান বের করে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। কেউ যদি নিয়মিত পেপে পাতার রস খেতে পারেন, তাহলে ক্যান্সার রোগের কোনও দুশ্চিন্তাই থাকে না।
কিছু গবেষনায় দেখা গেছে পেপে পাতায় উপস্থিত বেশ কিছু এনজাইম লিভার, লং. প্যানক্রিয়াটিক এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হজম শক্তি বাড়াতে
পেপে পাতায় থাকা প্রোটিস এবং অ্যামিলেস নামক দুটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে হজম ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে পাকস্থলি এবং কোলনের প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত পেপে পাতার রস পান করলে এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া মারা পরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেপটিক আলসারের মতো রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা হ্রাস পায়।
শরীরকে বিষমুক্ত করে
অনেকগুলো গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেপে পাতায় কার্পেইন নামক এমন একটি উপাদান রয়েছে যা শরীরে প্রবেশ করলে দেহের মধ্যে থাকা উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক শরীর থেকে বের করে দেয় এবং মাইক্রোঅর্গেনিজমগুলোকে মেরে ফেলে। যার ফলে শরীর থেকে রোগ দূর হতে বাধ্য থাকে।
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, পেঁপে পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার প্রভাবে অনেকেরই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে, বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের। তাই তো পেঁপে পাতার রস খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই বিষয়টি মাথায় রাখথে ভুলবেন না যেন!
আরও পড়ুন: